পবিত্র বাইবেলের পুরাতন নিয়মে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নারীর জীবনী আমরা দেখতে পাই। তাঁরা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসে অটল ছিলেন ও পবিত্র জীবন যাপন করেছেন। এমন একজন বিশেষ নারী চরিত্র হলেন রুথ। তিনি একজন অতি সাধারণ মেয়ে হয়েও অসাধারণ হয়ে উঠেছিলেন। পারিবারিক জীবনকে তিনি আমাদের সামনে আকর্ষণীয় ও অনুকরণীয় করে তুলেছেন। এভাবে তিনি আমাদের সামনে চিরজীবন্ত হয়ে রয়েছেন। আমরা রুথের জীবনী জানার মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনকে আরও অর্থপূর্ণ ও আনন্দদায়ক করে তুলতে পারব।
রুথ অর্থ হলো সঙ্গী বা বন্ধু। রুথ হলেন একজন মোয়াবী (মোয়াবীয়া) কন্যা। তাঁর স্বামী ছিলেন কিলিয়োন। তাঁর শ্বশুর ও শাশুড়ি হলেন : এলিমেলেখ (ইলিমেলক) ও নয়েমী (নয়মী)। মোয়াব দেশে ছিল তাঁর বসবাস ।
ইস্রায়েল দেশে একবার ভীষণ দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। সেসময় যুদা (যিহূদা) প্রদেশের বেথলেহেম (বৈৎলেহেম) শহরে বাস করতেন এলিমেলেখ এবং তাঁর স্ত্রী নয়েমী। তাঁদের দুইজন ছেলে ছিল। নাম ছিল মাহলোন (মহলোন) ও কিলিয়োন। বেথলেহেমে অনেক অভাব ছিল। সে কারণে স্ত্রী ও পুত্রদের নিয়ে এলিমেলেখ মোয়াব দেশে গেলেন। এই স্থানটি ছিল বেশ সমতল। অন্য অঞ্চলের চেয়ে এখানে ভালো ফসল হতো। তাই তাঁরা এখানে এসে বাস করতে লাগলেন। সুখেই কাটছিল তাঁদের দিনগুলো। কিন্তু তাঁদের সুখের দিনগুলো বেশি দিন স্থায়ী হলো না। হঠাৎ একদিন এলিমেলেখ মারা গেলেন। দুই ছেলেকে নিয়ে বিধবা হলেন নয়েমী। ধীরে ধীরে মাহলোন ও কিলিয়োন বড় হতে লাগলেন। তারপর পরিণত বয়সে দুই ভাই দুইজন মোয়াবী যুবতীকে বিয়ে করলেন। বড় ভাই মাহলোনের স্ত্রী হলেন অর্পা। আর ছোট ভাই কিলিয়নের স্ত্রী হয়ে আসলেন রুথ। নতুন আশা ও স্বপ্ন নিয়ে তাঁরা জীবন শুরু করলেন। কিন্তু এবারেও তাঁদের সুখের দিনগুলো বেশিদিন স্থায়ী হলো না। হঠাৎ করেই পরপর দুই ভাই মাহলোন ও কিলিয়োন মারা গেলেন। স্বামীহারা নয়েমী এবার হলেন পুত্রহারা মা। অর্পা ও রুথ অতি অল্প বয়সে হলেন বিধবা। দিশেহারা নয়েমী এবার মোয়াব ছেড়ে বেথলেহেমে ফিরে যেতে চাইলেন। দুই পুত্রবধু অর্পা ও রুথকে বললেন তাঁদের নিজ বাড়িতে ফিরে গিয়ে নতুন করে সংসার করতে। নয়েমীকে ছেড়ে যেতে প্রথমে তাঁরা রাজি হলেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অর্পা নিজ মা-বাবার বাড়িতে চলে গেলেন। কিন্তু রুথ কিছুতেই তাঁর শাশুড়িকে ছেড়ে গেলেন না।
নয়েমী বেথলেহেমে যাওয়ার জন্য তৈরি হলেন। তিনি আবারও রুথকে নিজ দেশে ফিরে যেতে বললেন। অর্পাকে দেখিয়ে তিনি রুথকে বললেন : “ওই দেখ, তোমার বড় জা তার নিজের লোকদের কাছে আর তার আপন দেবতাদের কাছে ফিরে গেল। তুমিও তোমার জায়ের মতো ফিরেই যাও!” কিন্তু রুথ কিছুতেই নয়েমীকে ছেড়ে যেতে রাজি হলেন না। রুথ তাঁকে উত্তর দিলেন: “তুমি যেখানে যাবে আমিও সেখানে যাব। তুমি যেখানে রাত কাটাবে আমিও সেখানে রাত কাটাব। তোমার জাতির মানুষ হবে আমারই জাতির মানুষ। তোমার ঈশ্বর হবেন আমার আপন ঈশ্বর। তুমি যেখানে মরবে আমিও সেখানেই মরব। মৃত্যু ভিন্ন অন্য কোনো কিছুই তোমা থেকে আমাকে আলাদা করতে পারবে না।” রুথ তাঁর প্রতিজ্ঞায় অটল থাকলেন। শেষ পর্যন্ত নয়েমী তাঁকে সঙ্গে নিয়েই বেথলেহেমে গেলেন । দীর্ঘ পথ হাঁটতে হাঁটতে তাঁরা বেথলেহেমে এসে পৌঁছলেন ।
বেথলেহেমে তখন ছিল ফসল কাটার সময়। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে রুথ নয়েমীর আত্মীয় বোয়াজের (বোয়সের) ক্ষেতে শস্য কুড়াতে গেলেন। বোয়াজ তাঁর প্রতি সদয় ছিলেন। নয়েমীর নির্দেশমতো রুথ আর অন্য কোথাও শস্য কুড়াতে গেলেন না। কারণ বোয়াজ ছিলেন রুথের স্বামীর পক্ষের আত্মীয়। নয়েমীর ইচ্ছা ও তাঁদের পারিবারিক নিয়ম অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত বোয়াজের সাথে রুথের বিয়ে হয়।
এরপর রুথ ও বোয়াজের ঘরে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। তাঁর নাম হলো ওবেদ। ওবেদের ছেলে ছিলেন জেসে (যোশী)। জেসের ছেলে ছিলেন রাজা দাউদ। আমরা জানি, মারীয়ার স্বামী যোসেফ ছিলেন দাউদ বংশেরই মানুষ। আমাদের মুক্তিদাতাকে ‘দাউদ-সন্তান যীশু’ নামে ডাকা হতো, কারণ তাঁর জন্ম হয়েছিল দাউদেরই বংশে।
১। নিজের স্বামী ও শাশুড়ির প্রতি তাঁর ছিল গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা;
২। নিজের সবকিছু ছেড়ে শাশুড়ির দায়িত্ব পালন করেছেন;
৩। তিনি শাশুড়ির বাধ্য ছিলেন। শাশুড়ি তাঁকে যা করতে বলেছেন তিনি তা-ই করেছেন;
৪। বংশ রক্ষা করতে বোয়াজকে বিয়ে করেছেন ;
৫। নিজে কষ্ট স্বীকার করেও সকল পারিবারিক দায়িত্ব পালন করেছেন;
৬। নিজের সুখের চেয়ে পারিবারিক দায়িত্ব পালনে গুরুত্ব দিয়েছেন।
কিলিয়নের সাথে বিয়ের আগে রুথ অন্য দেবদেবীকে বিশ্বাস করতেন। বিয়ের পর তিনি এক ঈশ্বরের পরিচয় পান। ঈশ্বরের প্রতি তাঁর ছিল অটল বিশ্বাস। তাঁর স্বামী মারা গেলেও, নিজের সুখের জন্য তিনি ঈশ্বরকে ত্যাগ করেন নি। বরং তিনি তাঁর শাশুড়িকে বলেছেন, “তোমার ঈশ্বরই হবেন আমার ঈশ্বর।” এতে ঈশ্বরের প্রতি তাঁর অটল বিশ্বাস প্রকাশ পায় ৷ জীবনের কোনো দুঃখকষ্টই ঈশ্বরের প্রতি তাঁর বিশ্বাসকে টলাতে পারে নি। ঈশ্বরের উপর গভীর বিশ্বাস ছিল বলেই তিনি নিজের দেশ, ধর্ম, আত্মীয়স্বজন সবকিছুই ত্যাগ করতে পেরেছিলেন।
সত্য ঈশ্বরের পরিচয় পাবার পর রুথ সবসময় ঈশ্বরের পথে বিশ্বস্ত থেকেছেন। পারিবারিক দায়িত্ব পালনের মতো ঈশ্বরের প্রতিও তিনি বিশ্বস্ত ছিলেন। রুথকে নিয়ে ঈশ্বরের একটি মহান পরিকল্পনা ছিল। ঈশ্বর চেয়েছিলেন রুথের জীবন যুগ যুগ ধরে একটি পথ দেখানো তারার মতো কাজ করুক। রুথ তখন তা বুঝতে না পারলেও ঈশ্বরের পরিকল্পনাকে গ্রহণ করেছিলেন। মানুষকে পাপমুক্ত করার জন্য ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে পৃথিবীতে পাঠাবেন। এই পুত্রকে দাউদ বংশে জন্মাতে হবে। রুথের মধ্য দিয়েই সেই পথ সুগম হলো। কারণ আমরা দেখেছি যে, মুক্তিদাতা যীশু রাজা দাউদের বংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং দাউদের ঠাকুরমা ছিলেন রুথ ।
ঈশ্বরের প্রতি বিশস্ত হওয়া আমাদেরও একান্ত প্রয়োজন। নিম্নলিখিত কাজগুলো করলে রুথের মতো আমরাও ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত হতে পারব :
১। রুথের জীবনী জানা ও তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা;
২। রুথের মতো করে ঈশ্বরের পথে বিশ্বস্ত থাকা;
৩। রুথের মতো করে সর্বদা ঈশ্বরের উপর নির্ভর করে চলা;
৪। ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত হওয়ার জন্য ঈশ্বরের কাছে শক্তি চাওয়া।
রুথ তাঁর নিজের সুখসুবিধার কথা চিন্তা না করে শাশুড়ির সাথে থেকে পারিবারিক জীবনের প্রতি বিশ্বস্ত হয়েছেন। ঈশ্বরের প্রতি তিনি গভীর বিশ্বাসী ছিলেন। ঈশ্বর রুথের মধ্য দিয়ে একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করেছেন।
১। পরিবারের জন্য তুমি কীভাবে স্বার্থত্যাগ কর, তা লেখ ও দলে সহভাগিতা কর ৷
২। কী কী ভাবে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসে অটল থাকা যায়, তার একটা তালিকা তৈরি কর।
ক) রুথের শ্বশুরের নাম হলো ___ ।
খ) রুথের শ্বশুর- শাশুড়ি ___ থেকে মোয়াব দেশে এসেছিলেন ।
গ) নিজের স্বামী ও শাশুড়ির প্রতি রুথের ছিল গভীর ___ ও শ্রদ্ধা ।
ঘ) বেঁচে থাকার প্রয়োজনে রুথ ___ কুড়াতে গেল ।
ঙ) বোয়াজকে রুথ বিয়ে করেছিলেন ___ রক্ষার জন্য ।
ক) রুথ তাঁর শাশুড়িকে বলেছেন | ক) রুথ সবসময় ঈশ্বরের পথে বিশ্বস্ত থেকেছেন । |
খ) কিলিয়নের সাথে বিয়ের আগে রুথ | খ) এবং দাউদের ঠাকুরমা ছিলেন রুথ। |
গ) সত্য ঈশ্বরের পরিচয় পাবার পর | গ) “তোমার ঈশ্বরই হবেন আমার ঈশ্বর ।” |
ঘ) রুথ নিজের সুখের চেয়ে | ঘ) রাজা দাউদের বংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। |
ঙ) মুক্তিদাতা যীশু রাজা দাউদের বংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন | ঙ) পারিবারিক দায়িত্ব পালনকে গুরুত্ব দিয়েছেন। |
চ) অন্য দেবদেবীকে বিশ্বাস করতেন । |
ক) রুথ কোন দেশের নারী ছিলেন ?
খ) রুথের স্বামীর নাম কী ?
গ) স্বামীর মৃত্যুর পর রুথ কী করেছিলেন?
ঘ) রুথের বড় জা তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পর কী করেছিলেন?
ক) রুথের পরিচয় দাও ।
খ) পারিবারিক জীবনে রুথের বিশ্বস্ততার বর্ণনা দাও।
গ) ঈশ্বরের প্রতি রুথের অটল বিশ্বাস ও বিশ্বস্ততার বিবরণ দাও ।
ঘ) রুথের কাছ থেকে তুমি কী শিক্ষা নিতে পার ?